ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

ইনু ডাকাতের অস্ত্রভাণ্ডার অক্ষত, ৪০ সহযোগী অধরা

Enoছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া :: 

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার আলোচিত ‘ইনু বাহিনী’ প্রধান, দুর্ধর্ষ ডাকাত ও বনদস্যু মো. ইউনুছ ওরফে ইনুর (৪৭) অস্ত্রভাণ্ডার এখনো অক্ষত। ওই বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড জসিমউদ্দিনসহ প্রায় ৪০ সদস্য রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে পুলিশ বলছে, এদের ধরতে অভিযান চলছে।

পুলিশ গত শুক্রবার সকালে কক্সবাজারের রামুর

ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের হাজিপাড়া এলাকা থেকে ইনুর গুলিবিদ্ধ ও ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে। পুলিশের ধারণা, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিবদমান দুই ডাকাতদলের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ইনু।

চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পাগলির বিলের ভিলেজারপাড়ার মৃত মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে ইনু। পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও বন দস্যুতাসহ ১৭টি মামলা রয়েছে বলে চকরিয়া থানা পুলিশ জানিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, ইনু একসময় স্থানীয় বিএনপির নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ইনু এই দলে যোগ দেন। নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত ডুলাহাজারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

ইনু ডুলাহাজারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক কি-না জানতে চাইলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল এহেছান চৌধুরী সাইফুল চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘বিএনপি নেতা  চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়ার কাছের লোক ছিলেন ইনু। পরে আওয়ামী লীগের কিছু সিনিয়র নেতাকে ম্যানেজ করে ইনু ডাকাত ডুলাহাজারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডুলাহাজারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ইনু যে দলের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন তা এলাকায় ব্যাপক প্রচার পায় তিনি খুন হওয়ার পর। এমন একটি পদে থেকে ইনু যে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করেছেন, বহু মানুষকে পথের ফকির করেছেন। এসব মনে হলে নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিতে আমাদের লজ্জা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইনুর বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে খুটাখালী ইউনিয়নের ফুলছড়ির বিভিন্ন পাহাড়ে। এসব পাহাড়ে রয়েছে তাঁর একাধিক আস্তানাও। ইনুর বাহিনীতে কম করে হলেও ৪০ সদস্য রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে অপরাধ করার সুবাদে খুটাখালী, ফুলছড়ি, পূর্ণগ্রাম, ঈদগাঁও, ঈদগড়, উখিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, মহেশখালীসহ বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত ও দাগী অপরাধীরা ওই বাহিনীর সদস্য। শুধু গত দেড় বছরে বাহিনীটির হাতে অপহরণের শিকার হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। অপহরণ করে আস্তানায় নিয়ে গিয়ে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায়ের পর অপহূতদের ছেড়ে দেওয়া হত। অপহূতের পরিবারও ভয়ে ওই বাহিনীর বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস করতেন না।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে

৭-৮ সদস্যের একদল লোক একটি মাইক্রোবাসে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পাগলির বিলের ভিলেজার পাড়ায় আসে। ওই সময় বাড়ির কাছের একটি চায়ের দোকানে ইনু আড্ডারত ছিলেন। এক পর্যায়ে এসব লোকজন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তাঁকে গাড়িতে তুলে নিয়ে কক্সবাজারের দিকে রওনা দেন।

চকরিয়া থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম খান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আলোচিত বাহিনীর প্রধান ইনুর নেতৃত্বে গত দেড় বছরে অসংখ্য মানুষকে অপহরণ করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাঁকে হন্য হয়ে খুঁজলেও বার বার অধরাই ছিলেন তিনি। পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিবরণ অনুযায়ী ১৭টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।’

সাদা পোশাকের পুলিশ ইনুকে ধরে নিয়ে গেছে, পরিবারের এমন দাবির বিষয়ে ওসি বলেন, ‘পুলিশ তাঁকে ধরেনি, শুনেছি কিছু সন্ত্রাসী ইনুকে অপহরণ করেছে। এর পর তাঁকে উদ্ধারে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে সোর্স নিয়োগ করে। পরদিন সকালে শুনি, তাঁর গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে রামু এলাকায়।’

এদিকে রামু থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের হাজিরপাড়া এলাকা থেকে ইনু ডাকাতের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করি। ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশে তৈরি বন্দুকও উদ্ধার করা হয়।’

ওসি প্রভাষ দাবি করেন, ‘ঈদগড়ের পাহাড়ি এলাকার বিবদমান দুই ডাকাত দলের মধ্যে গোলাগুলিতে ইনু ডাকাত নিহত হয়েছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘চকরিয়া থানায় আমি দেড় বছরের বেশি সময় ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। ওই সময় খুটাখালী, ডুলাহাজারা বা আশপাশের এলাকায় যেসব অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটেছে, সবই ইনুর নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিল। তাঁর অপরাধ কর্মকাণ্ডের কারণে খোদ পুলিশও অতিষ্ঠ ছিল।’

পাঠকের মতামত: